
কমেছে পাটের রফতানি নগদ সহায়তা, বেড়েছে মাশুল
- আপলোড সময় : ০৬-০৫-২০২৫ ০৪:৩০:৫৪ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-০৫-২০২৫ ০৪:৩০:৫৪ অপরাহ্ন


পাট রপ্তানিতে কমেছে নগদ সহায়তা। পাশাপাশি বেড়েছে রপ্তানি মাশুল। বিদ্যমান রপ্তানি নীতি অনুযায়ী কাঁচা পাট হচ্ছে শর্তসাপেক্ষে রপ্তানি পণ্য। যদি একসময় ভারত ছিলো বাংলাদেশি পাটপণ্যের বড় বাজার। কিন্তু বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানির ওপর ভারত অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে রাখায় দেশটিতে পাটের সুতা রপ্তানি কমে ৫ ভাগের ১ ভাগে নেমেছে। তারপর বর্তমান সরকার কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে মাশুল (ফি) বাড়িয়েছে। প্রতি বেল কাঁচা পাট রপ্তানিতে সরকার রাজস্ব হিসেবে নেবে ৭ টাকা, এতোদিন তা ছিল ২ টাকা। অর্থাৎ সাড়ে তিন গুণ মাশুল বাড়ানো হয়েছে। আর পাটজাত পণ্যের প্রতি ১০০ টাকা রপ্তানি মূল্যের বিপরীতে এখন দিতে হবে ৫০ পয়সা, যা এতোদিন ছিল ১০ পয়সা। এ হার পাঁচ গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এমনিতেই বছর বছর কমছে দেশ থেকে পাটজাত পণ্য রপ্তানিও। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে হয় ৯১ কোটি ১৫ লাখ ডলার। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আরও কমে হয় ৮৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার। বছরে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ বেল কাঁচা পাট উৎপাদন হয় দেশে। তার মধ্যে ৬০ লাখ বেল পাটপণ্য উৎপাদনের জন্য লাগে।
সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীনসহ ১৩টি দেশে বাংলাদেশ থেকে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে। ওই অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বা ১৬ কোটি ৪ লাখ ৮৭ হাজার মার্কিন ডলারের কাঁচা পাট। আর মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ভারত থেকে ৯ কোটি ডলারের বেশি এসেছে। কিন্তু চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে পাট খাতে নগদ সহায়তা কমানো হয়। বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য রপ্তানিতে সরকার নগদ সহায়তা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে। তাছাড়া নগদ সহায়তা পাটজাত পণ্যে ৭ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং পাট সুতায় ৫ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
সূত্র আরো জানায়, কয়েক মাস আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর ব্যতীত রাজস্ব (এনটিআর) খাতের আদায় বাড়ানোর অংশ হিসেবে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠায়। সে অনুযায়ী পাট অধিদপ্তরও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কাছে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে রাজস্ব মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। পাট অধিদপ্তর অবশ্য অর্থ বিভাগের তাগিদ পেয়ে পাঁচ বছর ধরে ওই মাশুল বাড়ানোর জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখে আসছে। তবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি কাঁচা পাট রপ্তানিতে প্রতি বেলে ৫ টাকা ও পাটজাত পণ্যে প্রতি ১০০ টাকায় ৩০ পয়সা রাজস্ব মাশুল নির্ধারণের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায়। আর ওই প্রস্তাবে বাণিজ্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সম্মতি দেন। প্রতি বেল কাঁচা পাট রপ্তানিতে ৭ টাকা আর প্রতি ১০০ টাকার পাটজাত পণ্যের রপ্তানি মূল্যের বিপরীতে ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে অর্থ বিভাগ।
এদিকে নতুন হার কার্যকর হলে দুই ধরনের পণ্যে পাট অধিদপ্তরের বাড়তি প্রায় ১৫ কোটি টাকা আয় হবে। বর্তমানে এভাবে তিন কোটি টাকার মতো আয় হয়। রপ্তানির সময় তা ব্যাংকগুলোই উৎসে কেটে রাখবে। রপ্তানির দলিল হস্তান্তরের (ডকুমেন্ট নেগোসিয়েশন) সময় ওই অর্থ কেটে রেখে পাট অধিদপ্তরে জমা দেয় ব্যাংকগুলো।
অন্যদিকে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ)। সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সংগঠনটি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত অথবা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে। বিজেএসএ সংশ্লিষ্টদের মতে, পাটকে অন্যান্য খাতের সঙ্গে মেলালে হবে না। এখানে কৃষকের পাশাপাশি শ্রমিকের দিকও আছে। পলিপ্রপাইলিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে যখন প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে, তখন সরকার এমন সিদ্ধান্ত হতাশাজনক।
এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাটসচিব মো. আবদুর রউফ জানান, একদিকে পাটপণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমেছে, অন্যদিকে নতুন করে মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হলো। এতে রপ্তানিকারকদের ওপর চাপ বাড়বে। রপ্তানিকারকেরা আবেদন করেছেন। এটি পুনর্বিবেচনার জন্য অর্থ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ